মেহেরপুরে সাংবাদিকদের উপর ছাত্রলীগ ও যুবলীগের হামলার প্রতিবাদে সাংবাদিকদের মানব বন্ধন।
নিউজ ডেস্কঃ- গত শুক্রবার মেহেরপুরে ছাত্রশিবিরের সাথে ছাত্রলীগের দিনভ র সংঘর্ষের সময়ে মেহে রপুর জেলায় কর্মরত বিভিন্ন টিভি ও পত্রিকার সাং...
উল্লেক্ষ্য গত শুক্রবার মেহেরপুরে ছাত্রশিবিরের সাথে ছাত্রলীগের দিনভর সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে ছিল মেহেরপুর জেলা শহর। সংঘর্ষে ছাত্রলীগকর্মীরা জেলা জামায়াতের অফিসে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং ছাত্রশিবিরের দুইটি ছাত্রবাসে হামলা চালায়। ছাত্রশিবির এ অভিযোগ করে বলেছে তাদের একটি মোটরসাইকেলেও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। অপরদিকে ছাত্রলীগ পাল্টা অভিযোগ করে বলেছে, ছাত্রশিবির পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়ে শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করে তুলেছে।
মেহেরপুর সরকারি কলেজে অনার্স ভর্তি পরীক্ষায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। এ সংবাদ সংগ্রহকালে ছাত্রলীগকর্মীদের হাতে প্রথম আলোর মেহেরপুর প্রতিনিধি তুহিন আরণ্য, আমার দেশ প্রতিনিধি পলাশ খন্দকার ও দৈনিক দেশতথ্য পত্রিকার ফটো সাংবাদিক মিজানুর রহমান হামলার শিকার হয়ে আহত হন। পুলিশ ছাত্রশিবিরের ছাত্রাবাস থেকে জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি ইকবাল হোসেনসহ ২৪ শিবির কর্মীকে আটক করেছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল মেহেরপুর সরকারি কলেজে অনার্স ভর্তি পরীক্ষা ছিলো। পরীক্ষায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কলেজে ছাত্রলীগ ও শিবিরের মধ্যে মৃদ উত্তেজনা হয়। পরীক্ষা শেষে কলেজের বাইরে ছাত্রশিবির ও ছাত্রলীগকর্মীরা বিরোধে জড়িয়ে পড়ে। মূহুর্তের মধ্যে উভয়দলের কর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে প্রস্তুত হয়ে পড়ে। শুরু হয় উভয়দলের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ। ছাত্রলীগকর্মীদের ধাওয়া খেয়ে শিবিরকর্মীরা কলেজ পার্শ্বস্থ স্বপ্নায়ন নামের শিবির ছাত্রাবাসের মধ্যে অবস্থান নেয়। সেখান থেকে শিবিরকর্মীরা ছাত্রলীগকর্মীদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে ছাত্রলীগকর্মীরা ছাত্রাবাস ঘিরে ফেলে। তারা ছাত্রবাসে হামলা করে আগুন ধরানোর চেষ্টা করে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পুরো এলাকা চলে যায় ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে। বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র্যাব, গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যসহ পুলিশ কর্মকর্তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে ব্যর্থ হয়ে চরম অসহায়ত্ব নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের।
ঘটনাস্থলে ছুটে যায় সাংবাদিকরা। পেশাগতকাজে প্রথম আলোর প্রতিনিধি তুহিন আরণ্য ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে ছাত্রলীগনেতা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে আলাপকালে এক ছাত্রলীগকর্মী লাঠি দিয়ে সজোরে তুহিন আরণ্যকে আঘাত করলে সে মাটিতে পড়ে যায়। পুলিশ ও ছাত্রলীগ নেতারা তাকে উদ্ধার করে। এ সময় ছাত্রলীগকর্মীরা সাংবাদিক পলাশ খন্দকার ও মিজানুর রহমানের ওপরেও হামলা করে ক্যামেরা ভাঙচুর করে এবং একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। সাংবাদিকদের উদ্ধার করতে গিয়ে ছাত্রলীগের সাবেক জেলা সভাপতি মফিজুর রহমানসহ ৩ ছাত্রলীগ নেতাও আহত হয়। প্রাণভয়ে শহরের রাস্তা জনশূন্য হয়ে পড়ে।
এক পর্যায়ে ঘটনাস্থলে ম্যাজিস্ট্রেট অবিডিও মার্ডিও উপস্থিত হলে পুলিশ ছাত্রলীগকর্মীদের ঘিরে থাকা ছাত্রাবাস থেকে ছাত্রশিবিরের জেলা সভাপতি ইকবাল হোসেনসহ ২৪ শিবিরকর্মীকে আটক করে। এ সময় ছাত্রলীগকর্মীরা অবস্থান পরিবর্তন করে মিছিল নিয়ে জেলা জামায়াতের অফিসে হামলা চালিয়ে অফিসে আগুন ধরিয়ে দেয়। জেলা যুবলীগের সভাপতি সাজ্জাদুল আনাম এবং মেহেরপুর সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জানান, শিবিরকর্মীরা সশস্ত্র অবস্থায় তাদের ওপর হামলা চালালে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে। শিবিরকর্মীদের হাতে পিস্তল ছিলো বলে ছাত্রলীগ নেতারা অভিযোগ করেন। মেহেরপুর জেলা জামায়াতের আমির ছমির উদ্দিন বলেন, কথাকাটাকাটিকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগকর্মীরা এ হামলা চালিয়েছে। ছাত্রলীগকর্মীরা জেলা জামায়াতের অফিসের ভেতরে কম্পিউটার, ৩টি মোটরসাইকেলসহ মূল্যবান সামগ্রী ভাঙচুর করে অফিসে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। মেহেরপুর সদর থানার ওসি রবিউল ইসলাম জানান, পুলিশ স্বপ্নায়ন নামের শিবিরের ছাত্রাবাস থেকে কম্পিউটার সামগ্রীসহ লোহার রড উদ্ধার করেছে। ঘটনার সূত্রপাত কি নিয়ে তা পুলিশ খতিয়ে দেখছে। তবে শিবিরের ছাত্রাবাস থেকে কোনো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়নি। পুলিশ পৌঁছুনোর আগেই ছাত্রলীগকর্মীরা জেলা জামায়াতের অফিস পুড়িয়ে দিয়েছে বলে তিনি জানান। সংঘর্ষকালে সাংবাদিক আহত হওয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে মেহেরপুর প্রেসক্লাবের নের্তৃবৃন্দসহ কর্মরত সাংবাদিকরা।